পেকুয়া কক্সবাজারঃ
মাদ্রাসা ছাত্রী রেখা মনি ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার বাদী পিতা আইয়ুব আলী। একদিকে মেয়ে হারানোর যন্ত্রণায় কাতর তিনি। অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পেকুয়া থানার এসআই নাদির শাহ’র ঘুষ দাবীর চাপে। দফায় দফায় টাকা দিয়ে মেয়ের ধর্ষকদের আটক করিয়েছেন অসহায় এ পিতা। কিন্তু তারপরও নানা বাহনায় পাড়ার মুদির দোকানী আইয়ুবের ওপর ঘুষের চাহিদা বাড়িয়ে দেন এসআই নাদির শাহ। তাই, এখন আর মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (০৬ জুন) দুপুরে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজীর পাড়া গ্রামের নিজের ছোট্ট দোকানে বসে একবুক হতাশা নিয়ে এসব কথা বলছিলেন তিনি।
অসহায় আইয়ুব আলী বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামীরা যখন প্রকাশ্যে ঘুরে আমাকে হুমকি দিচ্ছিলো, তখন আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। মামলার আসামীদের আটক করার অনুরোধ নিয়ে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাদির শাহের কাছে গেলে, তিনি আমার কাছে বিনিময়ে টাকা দাবী করে। নিরূপায় হয়ে আমি ধারদেনা করে দুই দফায় তাকে ৬০ হাজার টাকা দেই। এরপর সে তিন আসামীর মধ্যে দুইজনকে আটক করে। পরে তাদের রিমান্ডে আনার কথা বলে আমার কাছে আরো ১০ হাজার টাকা দাবী করে। না দিলে মামলায় আসামীদের সুবিধার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই আমি বাধ্য হয়ে তাকে আরো ১০ হাজার টাকা দেই। সব মিলিয়ে আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসআই নাদির শাহ। এতে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসে গেছি। দোকানে ব্যবসায় পুঁজি হারিয়েছি। এমন জানলে বিচার থানায় না দিয়ে, আল্লাহর কাছে দিতাম।
ঘুষ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া থানার এসআই নাদির শাহ বলেন, আমি ওই মামলার বাদীর থেকে কোন ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিইনি। তার অভিযোগ জঘন্য মিথ্যাচার।
এব্যাপারে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ আলী বলেন, আসামী ধরতে বাদী থেকে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) তফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবো।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ২৭ জুলাই রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের হাজীর পাড়া গ্রামের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে কৌশলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পাশের একটি মৎস ঘেরের বাসায় মাদ্রাসা ছাত্রী রেখা মনিকে ধর্ষণ করে স্থানীয় তিন বখাটে। ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে একইদিন রাতে আত্মহত্যা করে সে। ওই ঘটনায় তিন জনকে আসামী করে রেখা মনির পিতা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে পেকুয়া থানা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন এসআই নাদির শাহ। মামলার আসামীরা হলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের হলুরঘাট এলাকার মকছুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম(২০), রাজাখালী ইউনিয়নের মিয়া পাড়ার মৃত আবুল হোছাইন প্রকাশ বাশারের ছেলে আলমগীর (২২) ও হাজীর পাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে রবিউল আলম (১৯)।